দেশে অবৈধ পথে টনে টনে আমদানি করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মাংস। দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এইসব মাংস দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। অবৈধ পাথে আসা এই মাংসগুলো দেশে নামকরা হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ফুটপাতের খাবার দোকান পর্যন্ত পৌছে গেছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জন সাধারণ।
জানা যায়, দেশে চাহিদার থেকেও বেশি পরিমাণে মাংসের উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও ভারত থেকে অবৈধ পথে আমদানি করা হচ্ছে এইসব অস্বাস্থ্যকর মাংস। আমদানি করা অস্বাস্থ্যকর মাংসের বেশিরভাগ মাংস দামিদামি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ছোট ছোট খাবার হোটেলে সরবরাহ করা হয়। যা রাজধানীর কাওরান বাজারের মাংসের দোকান ও জুরাইন থেকে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে দেশে মাংসের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্বেও এইসব মাংস রাজশাহী, সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, যশোর ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকা হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো দেশে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৭৫ দশমিক ২ লাখ টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৯২ দশমিক ৬৫ লাখ টন মাংস উৎপাদন হয়। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলাইপুর-মীরগঞ্জ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকানো হচ্ছে ভারতীয় মাংস। মোটরসাইকেল যোগে এইসব মাংস চলে যাচ্ছে দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ভারতীয় এইসব মাংসের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা হওয়ায় অবৈধ ভাবে অস্বাস্থ্যকর মাংস আমদানি করা হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাংসের দোকানগুলোতে সদ্য জবাই করা গরুর বিভিন্ন অংশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এক পাশে জবাই করা গরুর মাংস ছোট ছোট করে কাটা হচ্ছে, অন্য পাশেই কার্টন ও পলিথিনের প্যাকেট থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস বের করে ছোট সাইজ করা হচ্ছে। এ সময় প্যাকেটজাত মাংসগুলো জবাইকৃত গরুর মাংসের সঙ্গে মেশান দোকানের এক কর্মচারী। এ ছাড়া আরেক দোকানে কার্টন থেকে বড় বড় মাংসের টুকরো নতুন জবাই করা গরুর রক্ত ও পানি মিশিয়ে ঝোলানো হচ্ছে।
একাধিক দোকানের কর্মচারী জানায়, এইসব মাংসের চাহিদা অনেক। দাম কম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় এইসব মাংস সুপারশপ, অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে চায়নিজ হোটেলে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু কারওয়ান বাজারেই প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ মণ প্যাকেটজাত হিমায়িত মাংস গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এর বেশিরভাগ মাংস কালাভূনা ও কাবার বানানোতে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে এসব মাংস চলে যাচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পাড়া-মহল্লার মাংসের দোকানে। তারা মাংস পানির ড্রামে ভিজিয়ে রাখে। তারপর ভ্যানযোগে ফুটপাতের ভাতের হোটেল থেকে শুরু করে বড় বড় রেস্টুরেন্টেও তারা পৌঁছে দেন ভারতীয় মাংস। বিভিন্ন সময় এইসব মাংসের সংরক্ষণাগারে অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করলেও তারা আবার একই কাজ করেন।
বিভিন্ন এলাকার কিছু হোটেল কর্মচারীরা জানায়, মতিঝিল, গুলিস্তান, সায়েদাবাদসহ আশপাশের সব রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস দিয়ে যায় শনির আখড়া ও জুরাইনের কয়েকজন মাংস বিক্রেতা। বেশি মসলা দিয়ে রান্না অথবা কালাভুনা করায় বোঝার উপায় থাকে মাংসে সমস্যা আছে। এইসব হোটেল, রেস্তোরায় দিনের পর দিন মানুষ খেয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ূনঃ ঝিনাইদহে সন্ধান মিলেছে ৬ শিং বিশিষ্ট গরুর!
মাংস আমদানির জন্য সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে মাংস আমদানি করা যাবেনা। কিন্ত কখনো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়, আবার কখনও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) পরীক্ষাগারের সনদ দিয়েই আমদানি হচ্ছে মাংস।
খাবার অযোগ্য এসব মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায়ও ধরা পড়েছে। মাংস দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকিতে পড়ছে।
সূত্র: সমকাল