চলতি বছর বাগেরহাটে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে টমেটোর বাম্পার ফলন পেয়ে খুশি হয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু এখন বাজারে দাম কম থাকায় বাম্পার ফলনের সেই টমেটোই কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের মধ্যে হতাশা, তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
জানা যায়, বাগেরহাট জেলার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২-৩ টাকা কেজি দরে। এমন চিত্র জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাটসহ সর্বত্র। বাজারের এমন অবস্থায় কৃষকরা টমেটো জমি থেকে তোলার টাকাও ওঠাতে পারছেন না। তাই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটো নদীতে ও রাস্তার ধারে ফেলে দিচ্ছেন। নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৫০০ টন টমেটো।
কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি ও বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় টমেটোর দাম কমেছে। তবে কৃষকরা আগাম টমেটো বিক্রি করে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পেরেছে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি বছর বাগেরহাট জেলায় ১৮৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর চাষ হয়েছে ১৯৫০ হেক্টর জমিতে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৩ হাজার টন টমেটো বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষকরা জানায়, মাসখানেক আগে প্রতি কেজি টমেটো ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন টমেটোর দাম আগের মতো নেই। বর্তমানে বাজারে ২-৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা টমেটো তোলার শ্রমিকের খরচও ওঠাতে পারছেন না। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা নদীতে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন।
চিতলমারী উপজেলার বাখরগঞ্জ বাজারের টমেটো ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, আমি প্রায় ১৫ বছর যাবত টমেটোর চাষ ও এর ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। চলতি বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারলেও এখন টমেটার বাজারদর খারাপ। এত কম দাম আমি আমার ব্যবসার জীবনে দেখি নাই। ২-৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে কৃষক কোনোভাবে বাঁচা সম্ভব না। এইসব টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করলে কৃষক বাঁচতে পারতো।
জেলার কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক মিলন মণ্ডল বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ৫ লাখ টাকা ঋণ করে টমেটোর চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছি। হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় শ্রমিকের মুজুরিও তুলতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে ফেলে দিচ্ছি আবার অনেকগুলো পচেও যাচ্ছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয় চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলায়। এ বছর জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েক হাজার টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলায় চাষি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে চাহিদা চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি হচ্ছে। এ কারণে হঠাৎ করে দাম কমে গেছে। যার ফলে কৃষকও কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।