জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের আম। ইতিমধ্যেই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট। সেখানে প্রতিদিন ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে প্রচুর। আপাতত চরা দামেই বিক্রি হতে দেখা যায়। ক্রেতা চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার পৌর শহরের কালিবাড়ি বাজার, চৌরাস্তা, কালেক্টরেট চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সত্যপীর ব্রীজ, গোধুলী বাজার, সেনুয়া হাট, কোট চত্বর, আমতলা মোড়, তাঁতীপাড়া, মুন্সিরহাট, ঠাকুরগাঁও রোড যুব সংসদ মাঠ, রেল ক্রোসিংসহ বেশকিছু স্থানে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রির দৃশ্য চোখে পরে। এছাড়াও ফেরি করে বেশ কিছু ভ্রাম্যমান আম ব্যবসায়িকে আম বিক্রি করতে দেখা যায়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় হাড়িভাঙ্গা, ফজলি, সুর্যাপুরী, লাবুয়া, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি জাতের আম চাষ হয়।
এগুলোর মধ্যে স্থানীয় প্রজাতি সূর্যাপুরী ও হাড়িভাঙ্গা জাতের আমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বর্তমানে স্থানীয় গুটি জাতের আম বাজারে উঠলেও কয়েকদিনের মধ্যে অন্যান্য জাতের আম বাজারে উঠতে শুরু করবে। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী এলাকায় রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি সূর্যপূরী আম গাছ। প্রায় ২ বিঘা জমি জুড়ে আম গাছটি দেখতে দর্শনার্থীদের ভীড় জমে। এ আম ইতোমধ্যে সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। পাতলা আঁটি আর সুমিষ্ট গন্ধ যেন মন কেড়ে নেয়। পৌর শহরের কালিবাজাড়ি বাজারে বিভিন্ন জাতের আম উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির আম বিক্রি হচ্ছে। গুটি আম ৪০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ আম পরিবহণে চালু হচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন
সেখানে আম কিনতে আসা আব্দুল্লাহ নামে ক্রেতা বলেন, সূর্যাপুরী ও হাড়িভাঙ্গা জাতের আম কিনতে এসেছি। তবে আপাতত হিমসাগর ও গুটি আম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন আর কিছুদিনের মধ্যে প্রায় সব জাতের আম বাজারে উঠবে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে আসা আম ব্যবসায়ি নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বছর বালিয়াডঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আম বাগান কিনে থাকি। কেবলমাত্র আম ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। আপাতত গুটি প্রজাতির আম আনছি, আর কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যান্য সকল জাতের আম বিক্রি শুরু করবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৫ হাজার ৮০ হেক্টর। এর মধ্যে আম বাগানের সংখ্যা ৩ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমি ও বসত বাড়ির আম গাছের সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। যা গত বছরে আম আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ২৯ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকেনা এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। জেলায় আমের ভালই ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আমের চাহিদা থাকায় ব্যবসায়িরা লাভবান হবেন বলে প্রতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।