জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার হাট বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে কাঁচা ও পাকা মরিচ। মরিচের দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া রেলস্টেশন সহ প্রতিটি রেললাইন এখন লাল মরিচের সমারোহ। মরিচ শুকিয়ে বাজারজাত করলে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। তাই লাইনে শুকনো মাটির উপর পাটির উপরে শুকোতে দেয়া হচ্ছে লাল মরিচ। এ রেলগেইট এলাকাতেই প্রতিদিন কয়েকটি এলাকার চাষিরা মরিচ শুকাতে আসেন । এখান থেকে পাইকারী দরে কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এ স্টেশন এলাকা থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার শুকনা মরিচ কেনাবেচা হয়।
আলী হোসেন নামে একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে বিন্দু ও বাঁশগাড়া জাতের মরিচ আবাদ করেন। তিনি বলেন, নিড়ানী, সেচ ও পরিচর্যা পর্যন্ত তার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ঐ জমিতে মরিচ উৎপাদন হচ্ছে কমপক্ষে ১০ মণ। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ কচুর লতি চাষে ভাগ্য বদল চাষিদের
একই এলাকার কৃষক ফজলে আলম বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের ফলন আশানুরুপ হয়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এ রেল গেইট এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ কৃষকই চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি, এতে ১ লাখ টাকা খরচ হলেও লাভ থাকবে প্রায় ৩ লাখ টাকা।
রবি নামে এক কৃষক বলেন, পৌষ মাসে মরিচের চারা রোপণ করার পর থেকে মরিচ উৎপাদন পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। বিন্দু, সেকা, মাশকারা, মল্লিকা সহ বিভিন্ন জাতের চাষ হয় এই এলাকায়।
পাশের এলাকার স্বামীর সঙ্গে মরিচ শুকাতে আসা বেগম বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে চাষ করেছি, মরিচের চারা রোপণ, সার-বিষ, রোদে শুকানো সহ সব কাজ নিজেরাই করি, গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভালো মরিচ হয়েছে, এবারে নষ্ট হয়নি, মরিচের দামও বেশ ভালো, আমরা সবাই এবার খুশি। এদিকে, খেতে মরিচ সংগ্রহ কাজে শিশু-কিশোর পাশাপাশি পরিবারের বয়স্ক সদস্যরাও এতে যোগ দেন। প্রতিটি মরিচের ঝুড়ি ভর্তি হলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হিসেবে দিনে আয় করছেন কমপক্ষে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ১শ ৬৩ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হবে।