রাজধানী ঢাকায় বেশিরভাগ সবজি আসে পার্শ্ববতী জেলা মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে। যেখানে সবরকমের সবজি চাষাবাদ করা হয়। এজন্য এই জেলাকে কিচেন গার্ডেনও বলা হয়। বর্তমানে এই এলাকায় শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপির ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। মূলত শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে সারাবছরই পুষ্টিকর এই সবজিটির চাষ হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুলকপি চাষের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। অনেকেই ফুলকপি চাষের মাধ্যমে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক লাভের আশা করছেন। তেমনি এক কৃষক মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ গ্রামের মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। যিনি আগাম জাতের ফুলকপি চাষের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফুলকপির ব্যাপক ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৪ হাজার ফুলকপির চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের দু থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই ফুলকপি বাজারজাত করা যায়। যথাসময়ে চারা রোপণ, সেচ , কীটনাশক প্রয়োগ ও ভালভাবে পরিচর্যা করলে প্রতিটি ফুলকপির গড় ওজন হয় আড়াই থেকে ৩ কেজি। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক ফুলকপি বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। ফুলকপি চাষের মাধ্যমে এই এলাকার অনেক নতুন উদ্যোক্তা সফল হচ্ছেন পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে বলেও জানা যায়।
আরও পড়ুনঃ কুল চাষে আজিজুলের বাজিমাত
মোজাম্মেল বলেন, গত ৬ বছর ধরে ফুলকপি চাষ করছি। ফুলকপির পাশাপাশি মরিচ, বেগুন, টমেটো, বাধাকপি, গাজরসহ অন্যান্য সবজি চাষ করছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ৩ বিঘা জমিতে চাষ করছি ফুলকপি। সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি লাভ থাকবে ৬০-৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। বর্তমানে সারাবছরই ফুলকপির চাহিদার পাশাপাশি দাম ভাল থাকলেও শীতের শেষের দিকে কমতে থাকে দাম তাই আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করছি বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার পার্শ্ববতী উপজেলা হওয়ায় এখানকার সবজির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়াও পাইকারী বাজারও অনেক ভাল। যারফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চাষি ফুলকপি চাষ ঝুঁকে পড়ছেন। এখানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ফুলকপির ক্ষেতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শমূলক সেবা পেয়ে আসছেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে ঢাকার পার্শ্ববতী উপজেলা সিংগাইরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা যাতে সবজি চাষের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হতে পারে সেজন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণে প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুল্তান সপন বলেন, ফুলকপি এমনি একটি সবজি যেখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সি সহ শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সালফার। তবে আজকাল অনেকই বেশি লাভের আশায় কিংবা অজ্ঞতা বশে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পুষ্টিকর এই সবজির গুণগতমান নষ্ট করে ফেলছে। তাই রাসায়নিক সারে ব্যবহার কমিয়ে জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ফুলকপি চাষে চাষিদের প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও বাজারে চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছে। ফুলকপি চাষের পাশাপাশি যাতে চাষিরা বাড়তি লাভ করতে পারে সেজন্য আমরা ফুলকপির সাথে সাথী ফসল হিসেবে বাধাকপি চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি। সেসব নতুন উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে চায় তাদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা, সহযোগীতা ও সেবামূলক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।